পাকিস্তান : দুই জাতিতত্ত¡

Bengali translation of Pakistan: The two nation theory (30 March 2012).

মুল : লাল খান, অনুবাদ : এ কে এম শিহাব

বিগত পয়ষট্টি বছর যাবত, পাকিস্তানের শাসক গৌষ্ঠির উদ্দেশ্যমূলক ভাবে মহাজাতিত্ত¡ চাপিয়ে দেয়ার বহু বাষির্কী উৎসব পালন সর্ম্পূনরূপে সমাজের নিচে চাপা পড়ে র্ব্যথ হয়েছে । রাষ্ট্র কর্তৃক ক্রিকেট হিস্টরিয়া তৈরী, মিডিয়ার কৃত্রিম উত্তেজনা সৃষ্টি,স্বদেশপ্রেমের স্কুলের পাঠ্যসূচি রচনায় বিকৃত ইতিহাস উপস্থাপন জাতীয় গৌরবকে ম্লান করে দিয়েছে । বিশেষ করে দরিদ্র প্রপিড়িত মানুষের দু:খ দুর্দশা ও তাদের অন্তর বেদনা ঐসকল ইতহাস ও উৎসবে স্থান পায়নি । আপোষকামী ও বাজারী ঐতিহাসিকগন আমাদেরকে বিশ্বাস করাতে চায় যে, ২৩শে মার্চ,১৯৪০ সাল তারিখে পাশ হওয়া রেজুলেশনই পাকিস্তান তৈরীর মুলভিত্তি । এরূপ একটি স¤প্রদায়িক ও জাত্যাভিমানী ইতিহাস ভারতবর্ষ এবং বাংলাদেশে ও চালু আছে । তবে বিষয়টি এত সহজ নয় । ১৯৪৭ সালের স্বাধিনতার ইতিহাসের সাথে যে সকল রাজনৈতিক ব্যাক্তির্বগ ও বিভক্তি পূর্বাপর অভিজাত স¤প্রদায়ের লোক জড়িত ছিলেন এতে তাদের স্বার্থই প্রাধান্য পেয়েছে । যদিও একটি সফল ষড়যন্ত্র সবসময়ই আনুষ্ঠানিক বৈধতা খোঁজার চেষ্ঠা করে, এবং পায় ও কিন্তু তা ইতিহাসের শাস্তি থেকে রা পায় না ।

“মুসলিম জাতি” ধারনাটি ইহার ঐতিহাসিক ঊন্নয়ন ও বাস্তবতার সাথে কোন মিল খোঁজে পাওয়া যায় না । যদি মুসলিমগন একটি জাতি হত তবে সৌদি আরাব থেকে ইন্দোনেশিয়া যেতে ভিসার প্রয়োজন হতো না । জগতের বুকে কি এমন কোন মুসলিম দেশ আছে যেখানে কোন পাকিস্থানী ভিসা ছাড়া বাধা বিহীন প্রবেশ করতে পাড়বে? অন্যদিকে যদি এরূপ প্রশ্ন তুলা হয় যে, অতীতের ইতিহাসে “ ভারতীয় উপমহাদেশে কখন মুসলিমগন এক অভিন্ন জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ?” এটা প্রমান করা এবং ঐতিহসিকদের জন্য অসম্ভব হবে তাদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে স্বীকারোক্তি প্রদান ও ইতিবাচক জবাব দেয়া । এটা ও সমান সত্য যে, শিয়া সুন্নি এবং ধর্মতাত্তিক ব্যাখ্যকারীগন নিজেদের কে গোঁড়ামী এবং রহস্যবাদের মাপকাটিতে দলে উপদলে বিভক্ত করে রেখেছিল । এ ছাড়া বালুচ,সিন্ধি,পশতুন,কাশ্মীরি এবং পাঞ্জাবীরা কখন এক জাতি ছিল ? দেশ বিভক্তির আনুষ্ঠানিক ভাষ্য থেকে আসল কারণ বাদ পড়েছে এবং যা কায়েমী স্বার্থবাদীদের দ্বারা তা প্রচারিত ও পরিবেশিত হয়েছে ।

ব্রিটিশ উপনিবেশিক রাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় মতবাদ ছিল রোমান নীতি “এটা ভাগ করিয়া” । ইহা বাস্তবায়নের জন্য তারা স্থানীয় অভিজাত স¤প্রদায়কে আয়ত্মে আনা এবং ধর্মকে যন্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা ছিল অন্যতম । এর অংশ হিসাবেই ভারতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ নেতাদেরকে টানা হয়েছিল । মুসলিম লীগ প্রতিষ্টিত হয়েছিল উইলিয়াম এ, জে, র্আকহোল্ড এর নির্দেশনায় মুসলিম অভিজাত স¤প্রদায়ের লোকদের মাধ্যমে । এই ব্যাক্তিটি ছিল ১৯০৬ সালে ভারতের ভাইসরয় এবং বড়লাট, গিলর্বাট জন এলিয়ট, মূরে, কিনিয়নমাউন্ড, র্ফোথ র্আল অব মিন্টু এর মধ্যে একজন দালাল । অন্যদিকে ১৮৮৫ সালে বিটিশ আমলাতন্ত্রবাদী অ্যালান অক্টাভিউ হিউম কর্তৃক কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ।

স্থানীয় পর্যায়ের অধিকাংশ রাজনীতিবিদগণ লর্ড মেকলের পরিকল্পনার প্রতি অতি সন্তুষ্ট ছিল, যা তিনি ১৮৩৪ মিনিেিটর শিায় র্বননা করেছিলেন,“ভারতীয়রা রক্তে এবং রঙে, কিন্তু ব্রিটিশরা হলো স্বাদ,মতামত,নৈতিকতা এবং মেধায়” শ্রেষ্ঠ। ১৮৭২ সালে এই ব্রিটিশ সরকার ই প্রথম আদম শুমারীর কলামে ধর্মযুক্ত করে । ১৯৩৪ সালে মুহামেডান এ্যালো ওরিয়েন্টাল কলজ, আলিগড় এর অধ্য, স্যার থিওডোর মরিসন লিখেছিলেন,“ভারতে হিন্দু ও মুসলিম ছিল দুইটি স্বতন্ত্র জাতি...তাদেরকে আশ্বস্ত করা যাচ্ছে যে, তাদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের সভ্যতা সংরনে সবার্ত¥ক উদ্দ্যোগ গ্রহন করা হবে ।

উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন, “হিন্দু মুসলিম প্রতিদ্বন্ধিতা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের জন্য একটি বিরাট বাধাঁ” । তিনি উল্লেখ করেন যে, “ তারা ঐক্যদ্ধ হয়ে আমাদের সাথে যোগদান করলে, একটি স¤প্রদায়ের সৃষ্টি হবে, সমস্যাগুলো সমাধানের দরজা খোলে যাবে”। গান্ধি তাঁর হরিজন প্রবন্ধে ৭ই এপ্রিল,১৯৪৬ লিখেন যে,“ এই নাপাক সমাহার ও সমাবেশ গ্রহন (হিন্দু এবং মুসলিম ধর্মঘট) করার অর্থ হলো আমজনতার হাতে ভারতকে ছেড়ে দেয়া”। ১৯৪৬ সালের ফেব্র“য়ারীতে ব্রিটিশবিরোধী নৌসেনাদের বিদ্রোহের চরম সময়ে, মি: জিন্নাহ একটি প্রেস বার্তা বোম্বে ফ্রিপ্রেস জানার্লে প্রেরণ করেন, তিনি বলেন,“ আমি সকল রয়েল নৌসেনাদের আহবান করছি ...বিশেষ করে মুসলিম সেনাদের প্রতি তারা যেন কোন প্রকার সমস্যার সৃষ্টি না করেন, যতন পর্যন্ত না তিনি একটি গুরুত্বপূর্ন অবস্থার সমাধান না করতে পারছেন”। কংগ্রেস,মুসলিম লীগ এবং ব্রিটিশ রাজ ঐক্যব্ধ হয় পুজিঁবাদকে বিপ্লবী পরিস্থিতি থেকে সুরার জন্য এবং শ্রেণীঐক্য এবং সংগ্রামকে নস্যাত করতে । এই মহা সত্যকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলা বা দীর্ঘ সময় গোপন করে রাখা যাবেনা ।

১৯৪৬ সালের ফেব্র“য়ারীর সাধারণ ধর্মঘট, এবং সেনাবাহিনীতে ক্রমর্বধমান বিদ্রোহ, নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং পুলিশ বিদ্রোহ আরো প্রবল থেকে প্রবলতর হচ্ছিল এই পরিস্থিতিতে ইংরেজ রাজ ভারত ছাড়তে উদগ্রীব হয়ে উঠে । শোষন ব্যবস্থাকে অত রেখে কিভাবে মতার রদবদল করা যায় তা নিয়ে বেশ কয়েকটি বন্ধু সুলভ মিশন কাজ করেছিল । দি ক্যাবিনেট মিশন ২৩শে মার্চ ভারতে এসেছিল এবং তাদের পরিকল্পনা ১৬ মে প্রকাশিত হয় । সেই পরিকল্পনায় ভারতীয উপ মহাদেশের বিভক্তির কোন কথাই ছিল না । বরং এর পরিবর্তে একই মুদ্রা,যাতায়াত,প্রতির ব্যবস্থা এবং আর্ন্তজাতিক বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রন রেখে একটি কনফেডারেশন করার সুপারিশ করা হয়েছিল । মি: জিন্নাহ এবং মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্য়করী কমিটি এই পকিল্পনা বিপুল পর্যালোচনার পর সমর্থন ও গ্রহন করেছিলেন । ইহাই ছিল ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ, র্দ্ব্যথহীন স্পষ্ট লাহোর প্রস্তাব । দুই জাতি তত্তে¡র বিষয়টি বেশীর ভাগ নেতৃত্ব পর্যায়ের ব্যাক্তিগন অপ্রয়োজনীয় মনে করতেন । ১৯৭১ সালে পূর্ব বাংলার বিভক্তির পর চূড়ান্ত ভাবে ইহার উপযোগীতা হারিয়েছে । কংগ্রেস সভাপতি মাও: আবুল কালাম আযাদ ও এই পরিকল্পনা গ্রহন করেছিলেন । ৭ই জুলাই সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটি তার অনুমোদন প্রদান করেছিলেন । তবে আযাদের নিকট থেকে নেহেরু কংগ্রেসেরে সভাপতিত্ব ও মতা গ্রহনের পর ১০ই জুলাই একটি প্ররোচনামূলক সংবাদ সম্মেলন করেন এবং বেদনাদায়ক দেশ বিভক্তির পথ প্রসস্ত করেন । এডউইন মাউন্টব্যাটেন এর ভুমিকা,রণশীল ইংরেজ স¤প্রদায়ের অনুরোধ যে নেহেরুকে শক্তিশালী ভূমিকায় নিয়ে আসে তা আজ সকলের কাছেই দিবালোকের মত পরিষ্কার । ইহাই পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় অতি উৎসাহি মুসলিম লীগ ও জিন্নাকে রগান্বিত ও উত্তেজিত করে । ২৭শে জুলাই জিন্নাহ পরিকল্পনাটি প্রত্যাখান ও এবং দেশবিভাগের প্রস্তাব পুর্নব্যক্ত করেন । আযাদ সেই সময়কার অগ্নিঝড়া দিনগুলোর কথা তার বিখাত বই ইন্ডিয়া উইনস ফ্রিডম এ বণর্না করেন, “ আমি জাওহারলাল নেহেরুকে এই বলে সতর্ক করেছিলাম ইতিহাস সাী থাকবে ভারতের বিভাজনের জন্য মুসলিম লীগ নয় বরং কংগ্রেসই দায়ি । এই বিভাজন ছিল বিংশশতাব্দীর এক নিমর্ম গন হত্যা, লাখ লাখ মানুষ খুন হয়েছিল পাঞ্জাব ও বাঙলায় ।

এই উপ মহাদেশে স্বাধিনতার ৬৫বছর পর ও সমগ্র পৃথিবীর অর্ধেকের চেয়ে ও বেশী মানুষ ুধা,দারিদ্র, অসুখ বিসুখে আর নিপিড়নের মধ্যে দিনাতিপাত করছে । ব্রিটিশ রাজ এর খুব ভালোই জানাছিল যে, ধর্ম ভিত্তিক বিভাজনের মাধ্যমে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামকে জাতীয় স্বাধিনতার সংগ্রামের মধ্যেই সিমাদ্ধ করে দিত হবে। তা না হলে, ইহা সমাজিক সংগ্রামের ভেতর দিয়ে সামাজিক বিপ্লবে রূপ নেবে এবং পজিঁবাদি ও সম্রাজ্যবাদি লুন্ঠনকে ছুড়ে ফেলবে ।

১৯৩১ সালের ২৩শে মার্চ স্বাধিনতা সংগ্রামের প্রতিকৃত শহীদ ভগৎ সিং মাত্র ২৩ বছর বয়সে তার সহ যোদ্ধা সূখদেব এবং রাজ গুরুকে সাম্রজ্যবাদিরা লাহোরে ফাঁসির কাষ্ঠে জুলিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে । তারঁ সর্বশেষ বক্তব্য ছিল,“ আমি সেই স্বধিনতা চাই না, যেখানে ব্রিটিশ অভিজাত শোষক শ্রেণীর আসনে দেশীয় শোষক অভিজাত শ্রেণী আসিন হবে। সত্যিকার স্বাধিনতা আসতে পারে শুধুমাত্র সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে ”। এই স্বপ্ন সাধকে জাগিয়ে তোলা এখন সময়ের দাবী, ইতিহাস নতুন প্রজন্মের সামনে এই প্রশ্ন দাঁড় করিয়ে দিয়েছে ।